শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:১৪ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্কে উত্তেজনার নেপথ্যে

যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্কে উত্তেজনার নেপথ্যে

স্বদেশ ডেক্স: যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের নেতারা প্রায়ই দেশ দুটিকে অভিন্ন মূল্যবোধ ও একই কৌশলগত স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ‘সহজাত অংশীদার’ হিসেবে অভিহিত করে থাকেন।
স্নায়ুযুদ্ধের সময়কালের ঝুঁকিপূর্ণ সম্পর্কের (ওই সময় মস্কোর সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল ভারতের) ওয়াশিংটন ও নয়া দিল্লি দৃঢ়তার সাথে আরো ঘনিষ্ঠ হয়েছে, তাদের কৌশলগত ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা জোরদার করেছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে এই সম্পর্ক অব্যাহত রয়েছে। আর ট্রাম্প নিজেকে ভারতের বড় ফ্যান দাবি করেছেন।
কিন্তু শেষ দিকে এসে ট্রাম্প প্রশাসন ও নরেন্দ্র মোদি সরকারের মধ্যে নানা ইস্যুতে টানাপোড়েনের সৃষ্টি হয়েছে। এসবের মধ্যে রয়েছে ভারতের অত্যন্ত গভীরে থাকা সংরক্ষণবাদ, অনিশ্চিয়তাপূর্ণ বিধিনিষেধ, সাবেক ঘনিষ্ঠ মিত্র মস্কোর কাছ থেকে এস-৪০০ বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনার নয়া দিল্লির আগ্রহ ইত্যাদি।
বিশ্লেষকেরা এখন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করছেন যে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যকার ক্রমবর্ধমান মতপার্থক্য তাদের কৌশলগত সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। প্রধানমন্ত্রী মোদি ও তার সরকারের সাথে আলোচনার জন্য মঙ্গলবার দিল্লিতে অবতরণ করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেইও। এ প্রেক্ষাপটে আমরা কি জানতে চাইতে পারি, তারা এই আলোচনার মাধ্যমে তাদের মতপার্থক্যের নিরসন ঘটিয়ে বন্ধুত্বকে যথাযথ স্থানে ফিরিয়ে আনতে পারবে কিনা?

যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ভারত কেন গুরুত্বপূর্ণ?
যুক্তরাষ্ট্র এশিয়ায় তার দীর্ঘ মেয়াদি নিরাপত্তা কৌশলে ভারতকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান মনে করে। এই অঞ্চলে চীনা প্রভাব দমনের এই কৌশলে জাপান, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে ক্রমবর্ধমান প্রতিরক্ষা সহযোগিতা সম্পৃক্ত।
ওয়াশিংটন ২০১৬ সালে ভারতকে ‘প্রধান প্রতিরক্ষা অংশীদারের’ মর্যাদা দেয়। তারা একে অপরের সামরিক স্থাপনাগুলোতে প্রতিরক্ষা বাহিনীকে সুযোগ দিয়ে, তাৎক্ষণিক তথ্য বিনিময়ের ব্যবস্থাসহ বেশ কয়েকটি চুক্তিতে সই করেছে।
ভারতকে আরো প্রাসঙ্গিক করার জন্য গত বছর যুক্তরাষ্ট্র তার প্যাসিফিক কমান্ডের নাম বদলে করেছে ইন্দো-প্যাসিফিক কমান্ড। ভারতের মার্কিন সামরিক সরঞ্জাম ক্রয় বাড়ছে, যৌথ সামরিক মহড়া ঘন ঘন হচ্ছে।

দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে কী ঘটছে?
দুই দেশের মধ্যকার সঙ্ঘাতের একটি বড় উৎস হলো বাণিজ্য। মার্কিন কোম্পানিগুলো ভারতের ১.৩ বিলিয়ন লোককে সম্ভাবনাপূর্ণ আকর্ষণীয় বাজার হিসেবে দেখছে। কিন্তু দিল্লির সংরক্ষণবাদ ও অনিশ্চয়তাপূর্ণ বিধিনিষেধ ও নীতির ফলে সেখানে ব্যবসা করা খুবই কঠিন কাজ।
আর দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য এক দশক আগের ৬৬ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ২০১৮ সালে হয়েছে ১৪২ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু ট্রাম্প কষ্ট পেয়েছেন ভারতের অনুকূলে থাকা ২৪ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ঘাটতিতে।
বাণিজ্য বিরোধ কি কৌশলগত ও প্রতিরক্ষা সম্পর্কে প্রভাব ফেলবে?
অর্থনৈতিক ইস্যুগুলোকে কেন্দ্র করে মতপার্থক্য তীব্র হচ্ছে। মোদির পুনঃনির্বাচিত হওয়ার মাত্র এক দিন পর ওয়াশিংটন ভারতের ৬ বিলিয়ন ডলার মূল্যের বিশেষ বাণিজ্যিক সুবিধা (জিএসপি) বাতিল করেছে।
এর জবাবে ভারত আপেল, ডালসহ ২০টির বেশি মার্কিন পণ্যের ওপর আমদানি কর আরোপ করেছে। এসব পণ্যের মূল্য ১.৪ বিলিয়ন ডলার।
উত্তেজনা যাতে আর না বাড়ে, সেজন্য উভয় পক্ষই সচেতন। কিন্তু তবুও বিরোধ প্রশমিত হচ্ছে না।

অন্য কোনো বিরোধপূর্ণ ইস্যু আছে?
অবশ্যই। ভারত তার দীর্ঘ দিনের কৌশলগত স্বায়াত্তশাসনকে গুরুত্ব দেয়, উষ্ণ বৈদেশিক সম্পর্কের জটিল একটি জাল বজায় রাখার তার স্বাধীনতাকে মূল্য দেয়। বিশেষ করে ইরান ও রাশিয়অকে সে দীর্ঘ দিনের ঐতিহ্যবাহী বন্ধু মনে করে। এ দুটি দেশের কাছ থেকে সে যথাক্রমে তেল ও সামরিক সরঞ্জাম আমদানি করে অনেক দিন থেকে।
কিন্তু মার্কিন হুমকির কারণে ভারত বাধ্য হয়েছে ইরানের কাছ থেকে তেল কেনা বন্ধ করতে। ভারত ইরানি তেল কেনা বন্ধ করেছে মহা অনীহা নিয়ে। রাশিয়ার কাছ থেকে এস-৪০০ কেনার ভারতের সিদ্ধান্তেও আপত্তি জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
চীনা হুয়াওয়ে সরঞ্জাম ব্যবহার এড়াতেও ভারতকে বলে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটন বলছে, হুয়াওয়ে ৫জি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে গোয়েন্দাবৃত্তি করা হতে পারে। কিন্তু ভারত এখন পর্যন্ত এই ইস্যুতে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের এসব চাহিদা ভারতে প্রত্যাঘাতের সৃষ্টি করতে পারে। কারণ ভারতের জনসাধারণ বিদেশী শক্তির নির্দেশনার ব্যাপারে খুবই স্পর্শকাতর।
দুই দেশ এসব মতপার্থক্য খতিয়ে দেখার প্রেক্ষাপটে তাদের কৌশলগত অংশীদারিত্ব অনিশ্চয়তায় থাকতে পারে।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমস/সাউথ এশিয়ান মনিটর

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877